
কিশোরগঞ্জের মাদুর শিল্পীরা স্বল্প আয়েও খুঁজছেন সফলতা
নুর আলম বাবু, নীলফামারী ॥
বাংলার লোকশিল্পের অনন্য ঐতিহ্য মাদুর শিল্প। সুক্ষ বুনন আর নকশার কারনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাদুর শিল্পের রয়েছে আলাদা সুনাম। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পুঁজির সংকট, দুর্বল বাজার ব্যবস্থাসহ উন্নত প্রযুক্তির ভিড়ে হাতের পরশ-বোলানো তৈরি মাদুর শিল্প মৃতপ্রায়। এ পেশায় জড়িতরা জীবিকার রসদ খুঁজে না পাওয়ায় ঝুঁকছেন অন্য পেশায় কিংবা কেউ পড়ে আছেন বেকার অবস্থায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোমল হাতের পরশে পাট থেকে তৈরী করা হচ্ছে দড়ি। সেই দড়ি দিয়েই মোতার কাঠির সাহায্যে সুক্ষভাবে বুনানো হচ্ছে মাদুর। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের জন্য বিখ্যাত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার দুন্দিপাড়া,বড় ডুমুরিয়া, সিট রাজিব, বাংলা বাজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম । এখানকার তৈরী মাদুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বাহিরের জেলা গুলোতেও। তবে মাদুর তৈরীতে মুদ্রাবৃত্তির অভাব ও বাজারে নায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ এ শিল্পের কারিগড়রা। মৃতপ্রায় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্টপোষকতার কথা বলছেন করিগড়রা। কাঁচামালের দাম কমানোসহ এ খাতে সহজ শর্তে ঋণের দাবীও তাদের।
মাদুর শিল্পের কারিগড় আদুরী আক্তার বলেন, আমার স্বামী কৃষি কাজ করে। আমিও বাড়িতে গৃহিনীর কাজ কাজ করি। তবে বাপ-দাদার কাছে শেখা মাদুর তৈরী করা। এখনও টিকিয়ে রেখেছি। আগের চেয়ে জিনিসের অনেক দাম হয়েছে। মোতাও তেমন পাওয়া যায় না। একটি পাটি তৈরী করতে অনেক খরচ পরে।তাছাড়া প্লাষ্টিকের পাটি বের হয়েছে। এখন বাজারে মোতার তৈরী পাটির চাহিদা কমে গেছে। এখন তেমন পোষায় না। একটা পাটি তেরী করতে খরচ ৭০থেকে ৮০টাকা আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০থেকে ২০০টাকা।
আমিনুর রহমান নামের আর এক মাদুর শিল্পের করিগড় বলেন, আমাদের বংশ পরম্পরায় এই করে আসতেছে। আমিও এই পেশার সাথে যুক্ত। সারাদিন আমি আর আমার বাড়িয়ালী মিলে ৫টা ৭টা মাদুর তৈরী করি। পাশাপাশি কৃষি কাজও করি। এতে সংসার ভালোয় চলছে। তবে আমাদের সন্তানদের চিন্তা হয়। আমরা না হয় কষ্ট করে দিন পার করছি। সরকার যদি কোন সহায়তা করতো তাহলে কেউ কোম্পানি দিয়ে আমাদের শিল্পীদের মজুরী দিত। তাহলে আর বাজারে বিক্রি নিয়ে তেমন চিন্তা থাকতো না। প্লাষ্টিকের মাদুরের চেয়ে মোতার তেরী মাদুরের গুণগত মান অনেক ভালো।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের (বিসিক) নীলফামারী জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক হুসনে আরা খাতুন বলেন, যুগের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে মাদুর শিল্প। তাই কারিগরদের মাদুর শিল্পের পাশাপাশি অন্য পেশায় কাজ করতে হবে। যাতে তারা ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলও থাকে।
comment / reply_from
related_post
Popular Posts
newsletter
newsletter_description