
কাজের অগ্রগতি না থাকলেও প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান
নুর আলম বাবু, নীলফামারী ॥
নীলফামারী সদরের জনগণের যাতায়াতের পথ সুগম করতে ত্রান মন্ত্রনালয়ের আওতায় উদ্বোধন করা হয়েছে ৬টি গার্ডার ব্রীজ। ৬টি ব্রীজের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে ৪কোটি ২৮লক্ষ ৪৫হাজার ৯৪৮টাকা। উদ্ধোধনের নামে টেন্ডার ছাড়াই পূর্বের ব্রীজ গুলো অপসারণ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম। বিকল্প পথ নির্মান করে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানেও করা হয়েছে গরিমসি। দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পারাপার হচ্ছে যানবাহন। বিঘন্ন ঘটছে কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের কৃষকদের চাষাবাদেও। নির্মান কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাইল বসানো হয়েছে মাত্র একটি ব্রীজে। চলতি বছরের ২৮জানুয়ারীতে উদ্বোধন হওয়া সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়ন হতে শালমারা গামী রাস্তায় চৈতার কুড়া ব্রীজের চিত্র এটি।
কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো চলতি বছরের ২৩আগষ্ট। মাত্র পাইল বসানো ছাড়া কোন কাজের চিত্রের দেখা মিলছে না এখানে। প্রকল্পের অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুধু মাত্র রাস্তায় ফেলে রেখেছে জনগণের ভোগান্তি। একই তারিখে উদ্বোধন করা হয় ডোমার-নীলফামারী সওজ নীলাহাটি বাজার হতে লক্ষীচাপ কাচারী বাজার গামী রাস্তার দেওকুড়া পাড়ের গার্ডার ব্রীজেরও। সেখানেও উদ্বোধনের নামে অপসারণ করা হয় পূর্বের ব্রীজটি। পাশাপাশি দু’টি ব্রীজের কাজ থেমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা। চলাচলের পথ না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের গড়ে দেয়া বিকল্প পথে প্রতি মুহুর্তে ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা।
এদিকে কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের আরাজী রামকলা থেকে পার্শ্ববর্তী পাটকামড়ী যাওয়ার রাস্তায় লালুর বাড়ীর কাছে নির্মান হবে গার্ডার ব্রীজ। কিন্তু সেখানে ব্রীজ নির্মানের জায়গা পরিবর্তন করা হলেও অপসারণ করা হয়েছে পূর্বের ব্রীজটি। এতে ব্রীজ না থাকায় মানুষ চলাচলের রাস্তায় তৈরী হয়েছে মরণ ফাঁদ। লক্ষীচাপ ইউনিয়নের সবুজ পাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, আমাদের এলাকায় দেড় বছর আগে টেন্ডার ছাড়া দুটি ব্রীজ ভাঙ্গা হয়েছে। এতে কৃষি কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। ব্রীজের ওপারের ফসল এ আনতে গেলে রাস্তা না থাকায় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে ফসল তুলতে বাড়তি খরচ হচ্ছে ২৫’শ থেকে ৩হাজার টাকা। তাছাড়াও এখানে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। এখানে এমপি আসাদুজ্জামান নূর ভাই এসে ব্রীজের উদ্বোধনও করে গেছে। নির্ধারিত সময়ও বেঁধে দিয়েছিল।
কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হয়ে চার মাসে পা রাখলেও কোন কাজ করা হয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ অনেক দূর্ভোগে রাস্তা পারাপার হচ্ছি। সামনে বর্ষা মৌসুম এখানে যদি ব্রীজের কাজ করা না হয় তাহলে এ এলাকায় চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আমরা চাই যাতে দ্রুত ব্রীজ গুলো নির্মাণ করা হয়। লক্ষীচাপ ইউনিয়নের চৈতার কুড়া ব্রীজের পার্শ¦বর্তী এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ব্রীজটি ভাঙ্গার পরে আমরা এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মিলে এখানে একটা বাঁশের সাকো দিয়েছিলাম। সেটাও ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এখন রাস্তা থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ফিট গর্তে নামতে হয় আমার উঠতে হয়। আমাদের আগের ব্রীজটায় অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু ব্রীজটি ভাঙ্গার পর থেকে কোন কিছু পারাপার করতে হলে প্রায় ২০কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। ঠিকভাবে একটা সাইকেলে পার করা যায় না। অনেক সময় স্কুলের বাচ্চারা সাইকেল ধরে উল্টে পরে হাত পা ভাঙ্গে। সরকার যদি ব্রীজ নির্মান নায়ে করবে। তাহলে আমাদের ব্রীজ ভেঙ্গে কেনো জনগণের দূর্ভোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। এখানে তো কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কেউ আসে। শুধু উদ্বোধন সময় এসে পাইল করে গেছে। তখন আর কেউ মুখ ফিরে তাকায় নাই। আমরা চাই সাধারণ মানুষের মুখের দিকে চেয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেনো দ্রুত ব্রীজটি নির্মান করে দেয়।
সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের রামকলা এলাকার রিক্সা চালক ভূষেন চন্দ্র রায় বলেন, আমি গরিব মানুষ রিক্সা চলে খাই। সকাল অনেক কষ্টে রিক্সা পার করাতে হয়। অনেক সময় রিক্সার যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে যায়। এখানে ব্রীজটা অন্যখানে নির্মাণ করা হবে। কেনো আগের ব্রীজটা ভেঙ্গে রাখলো। দেখেন খাল করে রাখছে। রাস্তা পারাপার হওয়া যায় না। ৬টির মধ্যে ৪টি ব্রীজের নির্মান কাজের হেড মিস্ত্রি বলেন, আমি চারটি ব্রীজের নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছি। একটাতে পাইল বসানো হয়েছে। বাকী গুলোর কাজ শুরু করতেছি। আজকে কুন্দুপুকুর এলাকার ব্রীজের সীমানা নির্ধারণ করলাম। কাজ শুরু করেছি যেহেতু, শেষও হবে। কিন্তু সময় লাগবে।
লক্ষীচাপ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে, পূর্বের ব্রীজ গুলো টেন্ডারে বিক্রয় করা হয়। এই ব্রীজ গুলোর টেন্ডার হয়েছে কিনা তা জানতে বেশ কয়েক বার উপজেলা পরিষদে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম। তারা বলেছেন এখানে কোন টেন্ডার হবে না। তারা ব্রীজটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। সেখানে আমি বিকল্প রাস্তাও করে দেয় নাই ঠিকাদাররা। আমরা এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে রাস্তা পারাপার হচ্ছি। ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলম বলেন, সবুজ পাড়ায় যে ব্রীজটা নির্মান হওয়ার কথা। উদ্বোধনের সময় থেকে ব্রীজ নির্মানের সময় পার হয়ে গেছে।
তবুও কাজ করা হচ্ছে। পূর্বের ব্রীজটি যে অপসারণ করা হয়েছে সে বিষয়েও আমরা জানি না। নীতিমালায় ছিলো ব্রীজ নির্মানের সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিকল্প পথ গড়ে দিবে। কিন্তু তারা কোন বিকল্প পথ গড়ে নাই। ব্রীজ না থাকায় চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। লক্ষীচাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে দুটি ব্রীজের উদ্বোধন করে নুর ভাই। তখন একটা ব্রীজের পাইল বসানো ছাড়া আর কোন কাজ হচ্ছে না। ব্রীজ দু’টি ভেঙ্গে রাখায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ব্রীজ ভাঙ্গার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, নিয়ম হলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে পূর্বের ব্রীজ গুলো অপসরণ করা। এখানে টেন্ডার ছাড়াই পিআইও সাহেব ব্রীজ গুলো অপসারণ করেছে। এবিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তবে ব্রীজ দুটি দ্রুত নির্মাণ হওয়া দরকার।
এখানে বেঁধে দেয়া নির্মানের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কেনো যে কাজ বন্ধ হয়ে আছে, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। তবে আমরা কর্মকর্তাদের তলব করে যাচ্ছি, তারা বলছে কাজ হবে। প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ছয়টির মধ্যে একটি ব্রীজে পাইল বসানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ঠিকাদাররা এতোদিন কাজ করে নাই। তাছাড়া পরে বর্ষাও শুরু হয়েছে। এজন্য মেয়াদের আগে কাজ করা হয় নাই। তবে ব্রীজ নির্মান দেরী হলেও বিকল্প পথ করে দেয়ার বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এটা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করে দিবে। আমরা তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো। নীতিমালায় কাজের মেয়াদ শেষ হলে জরিমানার বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, কারো জরিমানা করা হয় নাই। বরং কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে কাজ শুরু হয়েছে। পাইল বসানোর কাজ চলছে।
comment / reply_from
related_post
Popular Posts
newsletter
newsletter_description