
কমলগঞ্জে শীতের শুরুতে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম
রাজু দত্ত, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ।। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে বেশ বিপাকে পড়েছেন স্বল্পআয়ী সাধারণ মানুষ। শীতের শুরুতে বাজার সরবরাহ বাড়লেও কমার লক্ষণ নেই সবজির দাম। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের শাক-সবজির।
সোমবার সকালে কমলগঞ্জ সদর, শমশেরনগর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও বাড়তে শুরু করেছে মোটা চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের বাড়তি দামের কারণে যেমন
একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনই বিক্রেতাদেরও কেনাবেচা কমেছে।
গত তিন দিনে মিল পর্যায়ে মোটা চাল প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে খোলা চালের দামও বেড়েছে কেজি প্রতি এক থেকে দুই টাকা। প্রতি কেজি পায়জাম ও গুটি স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৬ টাকায়। বিআর-২৮ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে বেড়েছে খোলা আটা-ময়দার দামও। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা আগে পাঁচ টাকা কম ছিল। একই ভাবে ভালো মানের ময়দার দাম ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। ডালের দামও গত তিন-চার দিনে কেজিতে
পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি প্রতি কেজি মশুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ এবং আমদানি করা ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।
বাজারগুলোতে শীতের আগাম সবজির সরবরাহ রয়েছে। তবে দাম বেশ চড়া। শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। গাজরের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। প্রতি পিস বাধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস দরে। পেঁপের কেজি ৫০ টাকা। এক কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে, একই দামে বিক্রি হচ্ছে পটল। ঢেড়শের কেজি ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, ধুন্দলও বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আকারভেদে চাল কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে
৩০ টাকা, শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
দুই মাস আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিলো। এক ধাপ দাম কমলেও আবারও গত মাসে ব্রয়লারের দাম পৌছায় ১৮০ টাকায়। এখন তা বিক্রি
হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। আর ডিমের হালি ৫০ টাকা। রিকশাচালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ যে হারে প্রতিটা জিনিষের দাম
বাড়ছে, তা ভাবতে পারছি না। সারা দিনে আয়-রোজগার বলতে কিছুই নেই। কিভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না। সাত জনের পরিবার এখন হিমসিম খাচ্ছি। সংসার চালাবো না কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
কৃষি মজুর শাওন আহমেদ বলেন, ‘সারা দিন পরের জমিতে কৃষি কাজ করে ৪০০ টাকা পাই। যখন বাজারে যাই তখন এই টাকায় কিছুই হয়না। তখন প্রয়োজনীয় পণ্য কিছু কম নিয়ে আসতে হয়। স্বাদ থাকলেও শিশুদের জন্য কিছু আনতে পারিনা।’ এদিকে বাজারের মুদি ব্যবসায়ীরা জানান, ‘পাইকারী বাজার থেকে বেশী দাম দিয়ে জিনিসপত্র আনতে হয়। তাই বেশী দামে জিনিসপত্র বিক্রি করতে হয়।’ কমলগঞ্জ পৌর বণিক সমিতির সহ-সভাপতি কাজী মামুনুর রশীদ ও শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি।
অহেতুক দাম বাড়ালে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করছি। ব্যবসায়ীরা যাতে করে কোন সিন্ডিকেট করতে পারে না সে দিকে আমাদের নজর রয়েছে। বাজারগুলো ঠিক রাখতে ভোক্তা-অধিকারের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।’
comment / reply_from
related_post
Popular Posts
newsletter
newsletter_description