মোঃআবু কাওছার মিঠু, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার নরাবো, নলীরটেক, নলপাথর, পশ্চিম কালাদি, ত্রিশকাহনীয়া, হান্ডিমার্কেট, পিঠাগুঁড়ি, টেকপাড়া, ডুলুরদিয়া ও কালিসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার জলাবদ্ধতায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় ফসলি জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
অনুমোদনহীন অবৈধ আবাসন প্রকল্পগুলো অবাধে পানি নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট করে ফেলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এলাকাবাসী কোন সুফল পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আবাসন প্রকল্পে বালি ভরাট চলছে। বালির সঙ্গে আসা পানিতে ডুবে যাচ্ছে ফসলি জমি। একই সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আভ্যন্তরিণ রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। বসত বাড়ির উঠানে পানি। ঘরের মেঝেতেও পানি। জলাবদ্ধতায় শাক-সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। পানিতে পুরো এলাকা থৈ থৈ করছে।
কোন কোন এলাকায় শিল্প কারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। কুচকুচে কালো রঙের এ পানিতে হাটাচলা করতে গিয়ে এলাকার মানুষ চর্ম রোগে ভুগছেন। আবাসিক আবাসন প্রকল্পের অপরিকল্পিত বালিতে নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জলাশয় ও জলাবদ্ধতার জমির দাম কম। তাই কমদামে জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে আবাসন প্রকল্পগুলো এসকল এলাকায় কৃত্রিমভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে রেখেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।
কাঞ্চন পৌরসভার নরাবো এলাকার মুদি দোকানদার জামান মিয়া বলেন, পানি নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানবার জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। আবাসন প্রকল্পের দায়িত্বহীনতায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
নলীরটেক এলাকার কৃষক রাজ্জাক মিয়া বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। আর চাষাবাদ করতে না পারায় অভাব অনটনের মধ্যে এ এলাকার মানুষের জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

পশ্চিম কালাদি এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালিব বলেন, এলাকার জমির দাম যখন হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন অবৈধ আবাসন প্রকল্পগুলো কৌশলে পানি নিষ্কাশন খালে বালি ভরাট করে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। তাতে একদিকে ফসলহানী হয়ে আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছি। অন্যদিকে জমির দাম বৃদ্ধি না হওয়ায় আমরা আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।
নলপাথর গ্রামের চাকুরিজীবি সাথী আক্তার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে কর্মস্থলে আশা যাওয়া করা যাচ্ছে না। হাঁটু সমান পানি দিয়ে প্রতিদিন আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এখানকার মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার ৭ সদস্য বিশিষ্ট টিম কাজ করছে। জলাবদ্ধতায় জড়িত আবাসন প্রকল্পগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নোটিশ করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা নিজ নিজ দায়িত্বে দূর করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই তার সফলতা আসবে।