কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় রবিবার(১৯ জুন) বিকাল ৫টা থেকে আকস্কিক ভাবে দ্রুত গতিতে পাহাড়ী ঢলের কারনে ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রাতেই আতংকিত গ্রামবাসীরা উপজেলার প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে সেচ্ছাশ্রমে গাছ ও মাটির ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। এলাকার বাসীন্ধারা নিঘুম রাত আতিবাহিত করেন। এছাড়া ঐ রাতেই পতনঊষার ইউনিয়নে লাঘাটা নদীর ঘোপীনগরে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে ২টি গ্রামের ২শ টি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। রাতেই উপজেলার পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ও সোমবার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের লাঘাটা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাতে ঘোপীনগর এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে কান্দিগাঁও ও রাধাগোবিন্দপুর এলাকায়। এতে শমশেরনগর, পতনঊষারের কেওলার হাওর ও মুন্সীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে দু’শতাধিকেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ঢলের পানিতে কিছু আউশ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে ২টি গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২শ টি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
কান্দিগাঁও এলাকার পানিবন্দি সাতির মিয়া, আব্দুল মন্নান, হাসিনা বেগম জানান, গতকাল রাতে লাঘাটা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি চলে আসে আমাদের বাড়ী-ঘর ও রাস্তা ঘাটে। রাতে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেও ভাঙ্গন ঠেকাতে পারিনি।
অপরদিকে, ধলাই নদীর পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম না করলে ও মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এরিমধ্যে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়া ফলে রাতে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের সুবিনয় দেবের বাড়ীর পার্শ্বে, চৈত্রঘাট এলাকার সুরঞ্জিত পালের বাড়ীর পার্শ্বে, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বাদে করিমপুর এবং সুরান্দপুর (কোনাগাঁও) গ্রামের বাসিন্দারা রাত জেগে টস লাইটের আলোতে সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। এছাড়া ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিন কুমড়া কাপন গ্রামের কাউন্সিলার রফিকুল ইসলামের বাড়ীর সম্মুখে, উত্তর কুমড়া কাপন গ্রামের এডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমানের বাড়ীর সম্মুখে, রামপাশা গ্রামের সৈয়দ বাড়ীর সম্মুখ, গোপালনগর, করিমপুর ও আলেপুর, সদর ইউনিয়নের লংগুর পার, মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রাতেই মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি এলাকার বাঁধ এলাকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দীন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সাকিবুল হাসান, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসিদ আলী বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন।
কমলগঞ্জে অবস্থানরত পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের পর্যবেক্ষক সাকিব আহমেদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিডিং অনুযায়ী সোমবার(২০জুন) দুপুর ৩টার রিডিং অনুযায়ী বিপদসীমার ৭১সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলি আহমদ খান বলেন, লাঘাটার ভাঙ্গনে প্রায় ২শটি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দীন বলেন, বন্যার আগাম প্রস্তুুতি হিসাবে ইতিমধ্যে উপজেলায় ৮টি অস্থায়ী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লাঘাটার ভাঙ্গনে পানি বন্দিদের নামের তালিকা তৈরি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তাদেরকে দ্রুত ত্রাণ দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন,আমরা ধলাই নদীর দিকে সার্বক্ষনিক নজরদারি করছি।
