দীর্ঘদিনের ঠিকানা সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে আগেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রশিদ খান। এবার এই আফগান লেগ স্পিনার নাম লিখিয়েছেন আইপিএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি আহমেদাবাদে।
আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে অংশ নেবে ১০ দল। আগের ৮টি সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে আহমেদাবাদ ও লখনৌ ফ্র্যাঞ্চাইজি। দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে খেলোয়াড় নিবন্ধনের কাজ করতে হবে। এরপর খেলোয়াড়দের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেই নিয়ম মেনেই ৩ জন ক্রিকেটারকে দলে আহমেদাবাদ। সেই ৩ জনের একজন হলেন রশিদ খান, বাকি দুইজন হার্দিক পান্ডিয়া এবং শুভমান গিল।
এর আগে কোচিং স্টাফদের নামও চূড়ান্ত করেছে হায়দরাবাদ। দলটির কোচচিং স্টাফদের নেতৃত্বে থাকছেন সাবেক ভারতীয় পেসার আশিস নেহরা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটার ও প্রধান কোচ গ্যারি কারস্টেন। দলটির টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক ইংলিশ ব্যাটার ও কাউন্টি ক্লাব সারের বর্তমান হেড কোচ বিক্রম সোলাঙ্কি। এর আগে এই ত্রয়ী আরেক আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে খেলোয়াড় কেনার জন্য আইপিএলের বাকি ৮ দলের মতোই ৯০ কোটি রুপি করে খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে বাকিদের সঙ্গে নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির পার্থক্য হচ্ছে, পুরনোরা চাইলে নিলামের আগে ৪ জন করে খেলোয়াড় ধরে রাখতে পারবে, আর নতুনরা সর্বোচ্চ ৩ জন করে খেলোয়াড় কিনতে পারবে। এর মধ্যে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা ১টি। এই ৩ জনকেই বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মতো ধরে রাখা খেলোয়াড় হিসেবে দেখাতে পারবে নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি।
নতুন ৩ খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রেও কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে হচ্ছে লখনৌ ও হায়দরাবাদকে। তিন খেলোয়াড়ের দাম যথাক্রমে ১৫ কোটি, ১১ কোটি ও ৭ কোটি রুপি পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, হার্দিক পান্ডিয়া ও রশিদ খান দুজনের জন্য ১৫ কোটি রুপি করে খরচ করেছে হায়দরাবাদ। হার্দিক দলের নেতৃত্বে থাকবেন। তৃতীয় খেলোয়াড় গিলের জন্য ৭ কোটি রুপি পারিশ্রমিক ঠিক করা হয়েছে। ফলে নিলামে আরও ৫৩ কোটি রুপি খরচ করতে পারবে হায়দরাবাদ।
হার্দিক ও রশিদ এই প্রথম আইপিএলে একই দলে খেলবেন। এর আগে রশিদ হায়দরাবাদ এবং হার্দিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন। দুজনেই নিজেদের পুরনো ক্লাবের সাফল্যের অন্যতম কারিগর। হার্দিকের ২৯ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারে রান ৭৬২, উইকেট ৩২টি। মুম্বাইয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত ৪টি আইপিএল শিরোপা জিতেছেন এই ভারতীয় পেস অলরাউন্ডার। কিন্তু গত দুই আসরে ইনজুরির কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। বিশেষ করে এই সময়ে বোলিং থেকে দূরে ছিলেন তিনি। ফলে আগের মতো আর কার্যকর না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়ে এবার সূর্যকুমার যাদবকে ধরে রেখেছে মুম্বাই।
অন্যদিকে রশিদ খান এতদিন হায়দরাবাদের মূল খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন। কিন্তু এবার দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের দুই নতুন পেসার আব্দুল সামাদ ও উমরান মালিককেও ধরে রেখেছে তারা। অথচ ২০১৭ আইপিএলে ৪ কোটি রুপিতে কেনার পর পরেরবার ৯ কোটিতে ধরে রাখে হায়দরাবাদ। আইপিএলে অভিষেকের পর ৭৬ ম্যাচ খেলে তিনি ঝুলিতে পুরেছেন ৯৩ উইকেট, গড় ৬.৩৩। আইপিএলের গত ৫ মৌসুমে একমাত্র জসপ্রীত বুমরাহ তার চেয়ে বেশি উইকেট (১০৪টি) নিয়েছেন।
২০২২ আইপিএলের জন্য রশিদ খানকে ধরে না রাখায় হায়দরাবাদের সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরে জানা যায়, রশিদ খানকে ধরে রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল হায়দরাবাদ। কিন্তু শর্ত ছিল, দলের মূল খেলোয়াড় হবেন উইলিয়ামসন, রশিদ দ্বিতীয়। তবে বেঁকে বসেন রশিদ খান। এরপর নিজেকে নতুন ঠিকানায় নেওয়ার পথ ধরেন তিনি। অর্থাৎ নিজের নাম নিলামে পাঠান তিনি।
আর গিল এর আগে ২০১৮ সাল থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন। সেখানে ভালো করায়একসময় ভারতের জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। এরইমধ্যে ২২ বছর বয়সী এই তরুণ ভারতের হয়ে ১০ টেস্ট ও ৩টি ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন। এমনকি তাকে কলকাতার ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবেও ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এবার আর তাকে ধরে রাখেনি কলকাতা। ফলে আহমেদাবাদে নাম লেখালেন তিনি।