আশ্রয় ফাউন্ডেশনের ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক”আশ্রয় রক্তযোদ্ধা ” সহস্র পূর্ণ করলো
রাকিবুল হাসান, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ নেই কোনো ব্লাড ব্যাগ, ক্যানুলা ও ব্লাডসেট, নেই রক্তের ক্রসম্যাচিং ও স্ক্র্যানিং কিট ও কেমিকেল। এমনকি নেই কোনো রক্ত সংরক্ষণের ফ্রিজিং মেশিন। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মানবিক আবেদন পোস্ট করার সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই একজন মুমূর্ষু বা জরুরি রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আর এ কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছেন আশ্রয় ফাউন্ডেশনের আশ্রয় রক্তযোদ্ধা নামক একটি ভার্চুয়াল গ্রুপের স্ব-উদ্যোগী তরুণগণ।
রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করে ফেইসবুক ওপেন গ্রুপগুলোতে পোস্ট দেয়ার পাশাপাশি তারা তাদের রক্তদানে উৎসাহী নিবন্ধিত সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেও রক্তদাতা সংগ্রহের মাধ্যমে রক্তের যোগাড় করে দিচ্ছেন। গত মে মাসের ২০ তারিখ থেকে নভেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত এই ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে ১০০০ জন রোগীকে বিনামূল্যে ডোনার ও সংগ্রহীত রক্তের ব্যাগ দিয়েছেন। তাদের এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রংপুর বিভাগসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও বিভাগের সর্বস্তরের সচেতনমহল।
এ বিষয়ে কথা হলে এই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এহছানুল হক মাহিম জানান, রক্তের অভাবে যেন আমাদের দেশে কোনো মানুষকে জীবন দিতে না হয়- এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ২০২০সালের এসএসসি ব্যাচের কয়েকজন বন্ধু মিলে পূর্বেই আমাদের প্রতিষ্ঠিত আশ্রয় ফাউন্ডেশনের একটি শাখা হিসেবে “আশ্রয় রক্তযোদ্ধা ” নামে একটি প্রজেক্ট বের করি । তখন থেকেই কারো রক্তের প্রয়োজন হলে নিজেরাই বিভিন্নমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে দিতাম। পরবর্তীতে এ কাজটি আরো ব্যাপক আকারে করার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখ থেকে আমরা উন্মুক্ত হটলাইনসেবা চালু করি। এই প্রজেক্টটি পরিচালনায় রয়েছেন এম এ মুমিত মাহিন (প্রধান সমন্বয়ক),আসিফ মাহমুদ (সহ সমন্বয়ক),মাফরুহা পারভীন উলফা(ইনচার্জ)আব্দুল্লাহ আল গালিব (কো- ইনচার্জ),ফারহানুল আলম(কার্যকরী সদস্য),শিহাব আহমেদ (কার্যকরী সদস্য)। এছাড়াও তন্ময় দেব বর্মন, হিমেল সরকার রিভু,শাহরিয়ার আহমেদ, কারিমুল ইসলাম সেজান,ইহসান ইফতেখার লাবীব,মোহাম্মদ নাজিব,আল জোবাইদ আলিফ,ইসমাইল হোসেন,সুমাইয়া সিথী , তিথী ফেরদৌস ও জোতির্ময় ঘোষদের মতো আশ্রয় ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যদের প্রায় সকলেই এই আশ্রয় রক্তযোদ্ধার পৃথিকৎ ।
জানা যায়, এই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে চলতি বছরের ২০মে প্রথম রক্তদাতা হিসেবে টিমের সিনিয়র সদস্য শামীম হাসান এবং ২য় রক্তদাতা হিসেবে নাফিস রায়হান রক্ত দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে উদ্যম গতিতে চলছে রক্তদানের মত এ মানবিক কাজ।নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই এই প্রজেক্টের আওতাভুক্ত বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পেইন নামক নতুন একটি অংশ যাত্রা শুরু করে । দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন সাঁওতাল আদিবাসীদের এলাকায় তারা বিনামূল্যে রক্তপরীক্ষা, রক্তচাপনির্ণয়,ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও ঔষুধপত্র সরবরাহ করেন । এ পর্যন্ত তারা ৬০০ লোকের রক্তপরীক্ষা করেন এবং এখন সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠীর ডাটাবেস তৈরীর কাজ করছেন তারা। রক্তপরীক্ষা শেষে তারা স্বাস্থ্যসচেতনতা ও রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে ধারণা প্রদান করেন।
আশ্রয় ফাউন্ডেশনের ব্লাড ব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র সদস্য হাসিবুল ইসলাম শান্ত জানান, আগামীতে একটি স্থায়ী ও দৃশ্যমান ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় ফেইসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমরা এলাকার যুবকদেরকে রক্তদানে উৎসাহ দিচ্ছি। আর যারা রক্তদানের মাধ্যমে এই মহৎ কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয় ফাউন্ডেশন ও আশ্রয় রক্তযোদ্ধা এর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অকৃত্রিম ভালবাসা জানাচ্ছি।