আফ্রিকার প্রাচীন মুসলিম ভূমি জিবুতি
তৃতীয় মাত্রা
তৃতীয় মাত্রা ধর্ম ডেস্ক : হর্ন অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার শিং অঞ্চলে অবস্থিত ছোট্ট দেশ জিবুতি। রাষ্ট্রীয় নাম ‘রিপাবলিক অব জিবুতি’। এর দক্ষিণে আছে সোমালিয়া, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইথিওপিয়া, উত্তরে ইরিত্রিয়া আর পূর্ব দিকে আছে লোহিত সাগর ও ইয়েমেন উপসাগর। অন্য আফ্রিকান দেশের মতো জিবুতির ভূমিও পর্বতসংকুল ও শুষ্ক। ২৩ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দেশে রয়েছে আটটি পর্বতমালা। তবে আছে ‘লেক আবি’ ও ‘লেক আসাল’ নামের দুটি বিখ্যাত লেক। জিবুতির লেক আবিতে তিন মিলিয়ন বছর আগের প্রস্তরখণ্ড উদ্ধার হয়েছে এবং সাড়ে তিন হাজার বছর আগে সেখানে মানববসতি স্থাপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়ার সঙ্গে জিবুতি ছিল পান্ট সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। খ্রিস্টপূর্ব ২৪৭ সালে জিবুতি ম্যাক্রোবিয়ানস সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়, যা জিবুতিতে ইসলাম আগমনের শুরু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।ধারণা করা হয়, মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় জিবুতিতে ইসলামের আগমন হয়। মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে একদল সাহাবি যখন আফ্রিকায় হিজরত করেন, তখন জিবুতিতেও ইসলামের আগমন হয়। দেশটির ‘জেইলা’ শহরে অবস্থিত দুই কিবলা বিশিষ্ট মসজিদ প্রমাণ করে জিবুতি আফ্রিকার প্রাচীনতম ভূখণ্ডগুলোর অন্যতম। দেশটিতে ইসলাম প্রচারে আরব বণিকদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ‘জেইলা’ জিবুতির প্রথম শহর, যা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল এবং এটাকে কেন্দ্র করেই প্রথম মুসলিম শাসন ‘দ্য কিংডম অব আদল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ইয়াকুবির মতে, কিংডম অব আদল ছিল একটি ছোট ও সমৃদ্ধ রাজত্ব, যার প্রাণকেন্দ্র ছিল জেইলা। নবম খ্রিস্টাব্দে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টীয় ১৩ শতকে হর্ন অব আফ্রিকায় মুসলিম ইফাত সালতানাতের সূচনা হয়, যার সীমানা বিস্তৃত ছিল জিবুতি ও উত্তর সোমিলায়। জেইলা শহরের ওলাসমা রাজবংশ ইফাত সালতানাতের গোড়াপত্তন করে। সুলতান ওমর ওলাসমা এই বংশের প্রথম সুলতান। ১৪১৫ থেকে ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জিবুতিতে পুনরায় আদল সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয়রা জিবুতি জয় করে এবং ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত তা শাসন করে। উসমানীয় শাসনামলে জিবুতি মিসরে নিযুক্ত পাশাদের শাসনাধীন ছিল। ১১ মার্চ ১৮৬২ জিবুতির আফার সুলতান ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ধীরে ধীরে জিবুতিতে ফ্রান্সের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৭ জুন ১৯৭৭ জিবুতি ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। জিবুতির জনসংখ্যা আট লাখ ৬৪ হাজার, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ মুসলিম এবং মুসলিমদের ৭৭ শতাংশই সুন্নি। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে সংবিধানে সব ধর্মের অনুসারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে জিবুতি অত্যন্ত পিছিয়ে। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং গ্রামে বাস করে। জিবুতির সংস্কৃতিতে রয়েছে আরব ও আফ্রিকার মিশ্রণ। দেশটির মুসলিমরা প্রধানত আরব-আফ্রিকান সংস্কৃতির ধারক। আম্মান ও ইয়েমেনের মুসলিমরা জিবুতিতে গিয়ে আবাস গড়ে তুলেছেন। দেশটির প্রধান ভাষা সোমালি, আরবি ও ইথিওপিয়ান। তবে ফ্রেঞ্চ ও ইতালিয়ান ভাষায়ও কেউ কেউ কথা বলে থাকে। ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।