
আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবীতে চলছে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন
মতিয়ার চৌধুরী-লন্ডন : কট্রর ধর্মান্ধ তালেবানরা যখন আফগান নারী ও মেয়েদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে, তখন "আফগান গার্লস লার্ন" নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারাভিযান চলছে দেশটিতে। ইসলামিক এই সংগঠনটি অবিলম্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দরজা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকারকে। সংগঠনটি বলছে মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে নারী শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে ধর্মান্ধ তালেবান সরকার। এনিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে টোলো নিউজ। প্রচারণা হোস্টের মতে ওবায়দুল্লাহ বাহির হল একটি অরাজনৈতিক পদক্ষেপ। সংগঠনটি তালেবানদেরকে মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলার আহ্বান জানানিয়ে বলছে যাতে মেয়েরা আসন্ন কাঙ্কর পরীক্ষায় প্রবেশ করতে পারে যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়-স্তরের। স্কুল বন্ধ থাকায় কাবুলের মেয়েরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেনা।
সংগঠনটির দাবী "এটি একটি অরাজনৈতিক প্রচারাভিযান। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংগঠনটি ’’ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নারীশিক্ষা’’ নামে একটি সেমিনারের আয়োজ করছে। এই সেমিনারে আফগান এবং বিদেশী অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আফগান এবং বিদেশী জ্ঞানী
পন্ডিতরা শিক্ষা সেমিনারে আলোচনা করবেন। সেমিনারের মূল আলোচ্য বিষয় নারী শিক্ষা ইসলামের পরিপন্থি নয়।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আফগান মেয়েদের জন্য স্কুল খোলার লক্ষ্য বর্ণনা করে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলেন তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে অল্পবয়সী মেয়েরা এবং মহিলারা তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে আপস করছে। আফগান নারী শিক্ষার্থীদের মতে মেয়েদের শিক্ষা
চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেয় কট্রর তালেবানরা। মেয়েরা তাদের কাঙ্কর পরীক্ষা দিতে পারেনি, তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। দেশটির ছাত্ররা মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় তৈরি করার জন্য ইসলামী আমিরাতের কাছে আবেদন করেছিল যাতে তারা
পরবর্তী কাঙ্কর পরীক্ষার জন্য ভর্তি হতে পারে। এই বছর "হাজার হাজার মেয়েকে কাঙ্কর পরীক্ষা দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।" নাজানিন নামের দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রী জানান তালেবান সরকার মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি কাঙ্কর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
নাজানিন এবং তার সহপাঠি আরো কয়েকজন ছাত্রী বলেন, "আমরা শুধু চাই স্কুল চালু হোক, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, আমরা চাই স্কুল খোলা হোক যাতে আমরা পড়াশোনা করতে পারি।" টোলো নিউজের প্রতিবেদনে উঠে এসছে লিমা নামে আরেক ছাত্রীর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার চিত্র। নারী ও মেয়েদের জন্য তালেবানের ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরের ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। গত বছরের আগস্টে কাবুল দখলকারী তালেবান শাসন নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব
করেছে, যেখানে অর্থনৈতিক সংকট ও বিধিনিষেধের কারণে নারীদের চাকুরী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েরা মানবাধিকার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে,বৈষম্যহীন, শিক্ষা, কাজ, জনগণের অংশগ্রহণ এবং স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আফগানিস্থানে তালেবানরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নারীদের চলাফেরা ও শিক্ষা ক্ষেত্রেবিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করে। নারীদের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রণকারী তালেবানদের দ্বারা আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে দেশটির নারীরা ৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, মহিলা এবং মেয়েরা স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস থেকেও বঞ্চিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সহিংসতার সম্মুখীন নারী ও মেয়েদের পালানোর কোনো পথ নেই। মেয়েদের স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান দাবি। লন্ডনে বসবাসরত আফগান নাগরিক ওয়াজিদুল্লা জানান
তার দু‘বোন চাকুরী করতেন আফগানিস্তানের একটি বিদেশী সংস্থায় তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্চেনা, চাকুরী হারিয়েচেন তার দু‘বোন ও ওই এলাকার আরো কয়েকজন নারী। শুধু মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরেনো বা চাকুরীই নয় বন্ধ করে দিচ্ছে দেশের মেয়ের স্কুল গুলো। তিনি বলেন অসভ্য তালেবানদের এমন সিদ্ধান্তে আফগান নারীরা সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বা তার মতো অনেকেই আর দেশে ফিরতে পারছেননা। ওয়াজিদুল্লা বলেন বর্তমান তালেবান সরকার আফগানিস্থানকে জাহিলিয়াতের যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইছে।
comment / reply_from
related_post
Popular Posts
newsletter
newsletter_description